বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
X
রোহান, ওই রোহান !!!
--হুম, বলো। কি হইছে?
-- তাড়াতাড়ি ওঠ, বাবা। তোর প্রাকটিক্যাল পরীক্ষায় দেরী হয়ে যাবে তো !! সাড়ে আটটা বেজে গেছে।
-- ও হ্যা। ইসসসিরে !!! লেট হয়ে গেলো বুঝি এবার। তাড়াতাড়ি নাস্তা যোগাড় করো, আম্মু।
-- নাস্তা আমি রেডি করেই রেখেছি। তুই যা ফ্রেশ হয়ে আয়।
-- এক্ষুনি, ফ্রেশ হয়ে আসতেছি আম্মু।
-- হ্যা। তাড়াতাড়ি আয়।
টুথব্রাশ নিয়ে বাথরুমে দৌড়ে গেলো রোহান। আজ ওর এইচ.এস.সি. পরীক্ষা শেষ হবে। অনেক কষ্ট করে ও এই পর্যন্ত এসেছে। ওর আব্বু ছোট বেলাতেই পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন। এরপর, মায়ের আদর, ভালোবাসায় এতোটা পথ পাড়ি দেয়া হয়েছে।
পনেরো মিনিট পর, রোহান বাথরুম থেকে বের হয়ে এলো, গোসল করেছে।
-- আম্মু নাস্তা কই?
--টেবিলে রাখা আছে। খেয়ে, তাড়াতাড়ি যা।
--ঝটপট নাস্তা করে বেরিয়ে পড়লাম।
কলেজে গিয়ে দেখি, সবাই রুমে বসে আছে। একটু পরেই এক্সাম শুরু হবে।
বিশ মিনিট পরেই খাতা দিলো লিখতে।
প্রাকটিক্যাল খাতায় তো অনেক কিছুই লিখেছি। কিন্তু এখন পরীক্ষার খাতায় একটু কষ্ট হচ্ছে। যাই হোক, ৪৫ মিনিটের মধ্যে লেখা শেষ হলো। এরপর, মৌখিক পরীক্ষা দিতে গেলাম। বেশ ভালোভাবেই পরীক্ষা শেষ হলো। বন্ধুবান্ধব দের সাথে কিছুসময় আড্ডা দিয়ে দুপুর আড়াইটার মধ্যে বাসায় ফিরলাম। অনেক ভালো একটা সময় কাটিয়েছি।
বাসায় এসে আম্মুকে ডাকলাম,
--আম্মু, আম্মু ! ও আম্মু !!!
কোনো সাড়াশব্দ পাচ্ছিলাম না।
একটু পরে খেয়াল করি যে, দরজায় তালা দেয়া। কিছুটা চিন্তায় পড়ে গেলাম। আম্মু কোথায় গেলো, এই দুপুরবেলা?
হঠাৎ, পাশের বাসার আন্টিকে দেখতে পেয়ে জিজ্ঞেস করি।
আন্টি, আম্মুকে দেখছেন? কোথায় গেছে, বলতে পারেন?
-- নাহ, বাবা। আমি তো দেখি নি।
ধুর, আম্মু এভাবে না বলে কোথায় চলে গেলো !!! মন খারাপ করে বাসার সামনে সিঁড়ি টার ওপর বসে অপেক্ষা করতে লাগলাম। প্রায় আধঘণ্টা পর, দূর থেকে দেখতে পেলাম আম্মু আসছেন।
কিন্তু, তার সাথে আরো কয়েক জন মহিলা আছেন।
বাসার সামনে এসে আম্মু বললেন।
--আব্বু, কখন আসছো?
-- আধঘণ্টা যাবত বসে আছি এখানে। কিছুটা রাগ নিয়ে বললাম কথাটা।
--আরে, বাবা। আমি তোর আন্টিদের বাসায় গিয়েছিলাম। এই যে তোর আন্টি। ওনাদের বাসাতেই ছিলাম। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা, ফর্সা সুন্দরি একজন মহিলাকে দেখিয়ে বললেন,
আম্মু। আমার মামাতো বোন। এখানে নতুন বাসা নিয়েছেন।
-- ওহ আচ্ছা। আমি, আন্টিকে সালাম দিলাম। তিনি, প্রতি উত্তরে জবাব দিয়ে বললেন,
বাহ, তাহমিনা। তোর ছেলে তো, অনেক বড় হয়ে গেছে।
-- হ্যা। তা ঠিক ই বলেছিস। আজ ওর এইচ.এস.সি. পরীক্ষা শেষ হয়েছে।
আচ্ছা, ভেতরে আয়। এখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আর কতো কথা বলবি।
আম্মু, আন্টিকে ভেতরে নিয়ে গেলেন। তারপর, তার সাথে বিভিন্ন কথা বলতে শুরু করেছেন। বিয়ে থেকে শুরু করে, আব্বুর মারা যাওয়া, তারপরে আমাদের সংসার কিভাবে চলছে, ইত্যাদি বিভিন্ন আলোচনা।
আমি ফ্রেশ হয়ে রুমে গিয়ে শুয়ে রইলাম।
আজ অনেকটা রিলাক্স মুডে আছি।
গতকাল, সারারাত ঘুমাই নি বললেই চলে। প্রাকটিক্যাল খাতা লিখতে হয়েছে। এতোদিন সময় পাই নি। তাই, অতিরিক্ত কষ্ট করতে হলো।
যাই হোক, এখন বেশ অনেকটা দিন একটু নিরিবিলি ঝামেলা হীন থাকতে পারবো।
তন্দ্রার মতো হালকা একটু ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। আম্মুর ডাকে ঘুম ভেঙে গেলো।
--রোহান, এই রোহান !!! এদিকে একটু আয়। তোর আন্টি, তোর সাথে কথা বলবে।
--ধুর !!! সকালেও একটু শান্তিতে ঘুমাতে পারলাম না। আর এখনও না। শালার, আমার কপাল টাই খারাপ !! হাই তুলতে তুলতে ঢুলু ঢুলু চোখে আন্টির সামনে গেলাম।
-- রোহান, তোমার স্টাডি কেমন চলে?
-- জি, আন্টি। ভালো।
-- মেট্রিক এ রেজাল্ট কি ছিলো?
-- এ + পেয়েছিলাম।
-- বাহ, খুব ভালো। কোন গ্রুপ নিয়ে স্টাডি করো?
-- সাইন্স।
-- হুম। খুব মেধাবী তুমি। তোমার আম্মুর কাছে সব শুনলাম।
-- আমি মৃদু একটু হাসলাম। আর মনে মনে ওনার চৌদ্দগুস্টি উদ্ধার করছিলাম। আমার এতো আরামের ঘুমটা ভাঙানোর জন্য।
-- তো, বাবা। কোন ভার্সিটিতে পড়বা, কোথায় কোচিং করবা, এসব কিছু ঠিক করেছো?
-- নাহ, আন্টি। আর পড়ালেখা করবো না। করলেও সেটা জব নেয়ার পর। শুক্রবার যেদিন অফিস বন্ধ থাকবে সেদিন ক্লাস করবো। তাও পরের বছর। এক বছর বাদ দেবো। নিজের কিছু টাকা - পয়সা জমিয়ে তারপর ভর্তি হবো। কারিগরি শিক্ষায়।
-- এসব কি বলছো তুমি !! এতো ভালো একজন স্টুডেন্ট আর তুমি কি না পড়ালেখা করবে না !!!
না, না, রোহান। এটা হতে পারে না। যতো টাকা লাগে আমি তোমায় দেবো। তুমি নিজের পড়ালেখা চালিয়ে যাবে।
-- নাহ, আন্টি। আমি নিজের খরচেই পড়বো। যদি, পড়ার মতো অবস্থা থাকে। নয়তো, আর পড়বো না।
-- তাহমিনা, তুই তোর ছেলেকে বুঝিয়ে বল। এভাবে নিজের সুন্দর ভবিষ্যৎ টা নষ্ট করে দেবে ও !!!
-- আমি কি বলবো বল, ছোটবেলা থেকে নিজে নিজেই এই অবধি পড়ালেখা চালিয়ে এসেছে। একটা টাকাও প্রাইভেটে খরচ করতে হয় নি। একা একা পড়া শিখেছে। কারো কাছে সাহায্য চাইবার ছেলে ও নয়। একদম, বাপের মতো হয়েছে। যা করবে বলে ঠিক করে, সেটাই করে। কারো কথা শুনবে না। কারো কাছে হাত পেতে কিছু নেবেও না।
-- তোদের চলে কি করে তাহলে?
-- বাড়িতে জমি আছে কিছু। সেগুলো "লিজ"
দিয়ে যে টাকা পাই, তাতেই মোটামুটি চলে যায়। দেখছিস না, কেমন চাকরি নেয়ার জন্যে ব্যাকুল হয়ে গেছে।
--আচ্ছা, শোন। আমি ইশার আব্বুর সাথে কথা বলে দেখছি, কিছু একটা ব্যবস্থা করতে পারি কি না, ওর জন্য।
-- দেখ, যদি পারিস। তাহলে তো ভালোই হয়।
রাতে, ডিনারের পর ঘুমাতে আসলাম। আম্মু অনেক আগেই ঘুমিয়ে গেছে।
আজ অনেক দিন পর ফেসবুকে ঢুকলাম।
এতোদিন, পরীক্ষার ব্যস্ততায় ফেসবুক চালাতে পারি নি।
কতোগুলি ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পেলাম। কিছু একসেপ্ট করলাম। আর কিছু ডিলিট দিয়েছি। হঠাৎ, একটা আইডি খুঁজে পেলাম। আইডির নাম "দুষ্টু মেয়ে" ( রুপক অর্থে ব্যবহৃত ) অনেক কিউট, কিউট স্টেটাস দেয়া ছিলো। ভালো লাগলো। ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট সেন্ড করে দিলাম।
বেষ্ট ফ্রেন্ডস দের সাথে অনেক রাত অবধি আড্ডা দিয়ে ডেটা অফ করে দেই। এরপর, হেডফোন কানে অল্প সাউন্ডে গান শুনতে শুনতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি, টের পেলাম না।
ভোরবেলা, জানালা দিয়ে রোদ এসে চোখে মুখে পড়ায় ঘুম ভাঙলো।
মোবাইলের দিকে তাকিয়ে দেখি নয়টা বেজে গেছে। ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করতে গিয়ে টেবিলে পেলাম, গরম গরম খিচুড়ি। এখনো ভাপ বেরোচ্ছে খিচুড়ি দিয়ে। পেট ভরে খেলাম। আহ, কি মজা !!! দারূণ লাগলো।
মাসুম ফোন করলো,
--দোস্তো, কোথায় তুই?
-- এইতো বাসায় আছি, তুই কি করছিস?
-- ধুর বাল। ভাল্লাগেনা। আমিও বসে আছি। আচ্ছা, বের হ। ঘুরতে যাবো।
-- ওকে। আসতেছি।
মাসুমের সাথে ঘুরতে বেরোলাম। প্রায় দুপুর অবধি আড্ডা দিয়ে বাসায় ফিরেছি।
গোসল করতে যাবো, তখনি আম্মু বললো,
--রোহান। বিকেলবেলা আমার সাথে তোর আন্টিদের বাসায় যাবি। দাওয়াত আছে সেখানে।
--আচ্ছা, ঠিক আছে। যাবো।
গোসল সেরে, লাঞ্চ কমপ্লিট করে একটু ঘুম দিলাম। কি আর করবো, কোনো কাজ নেই, পড়ালেখা নেই। শুধুই অবসর।
মাসুম, আবার ফোন দিলো।
--দোস্তো, বিকেলবেলা কি ফ্রি আছোস?
-- না রে। একটু দাওয়াতে যেতে হবে। আন্টির বাসায়।
--ও আচ্ছা। ঠিক আছে। রাখি, তাহলে।
-- আচ্ছা, রাখ।
আসরের আযানে ঘুম থেকে উঠলাম। মনটা খুব ভালো লাগছিলো। কেমন যেনো একটু খুশি খুশি হয়ে গেলো, কোনো কারণ ছাড়াই।
চোখে মুখে পানি দিয়ে ডায়রিটা নিয়ে বসলাম। দু এক কলম লিখি, সময় পেলেই।
আম্মু, রুমে এসে বললো,
--রোহান, আব্বু তৈরি হয়ে নে। একটু পরেই যাবো। তোর আন্টি আবার ফোন করেছিলো। তাড়াতাড়ি যেতে বলেছে।
-- আম্মু, কিসের দাওয়াত?
-- আরে, বাবা। তোর আন্টির মেয়ে, মানে তোর খালাতো বোন হয়। ওর জন্মদিনের অনুষ্ঠান আজ।
--ওহ, আচ্ছা।
--হুম, তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নে।
আমি মেয়েদের থেকে অনেক টা দুরেই থাকি। প্রেমের ঝামেলা তো একেবারেই নেই। কিন্তু, মাঝে মধ্যে এমন কিছু মেয়েকে দেখি, যাদের দেখলেই, মন ছুঁয়ে যায়।
নীল শার্ট, প্যান্ট আর বুটজুতো পড়ে, তৈরি হলাম। আম্মু দেখে বললো, বাহ..আমার আব্বু টাকে নায়কের মতো লাগছে। আম্মুর মুখে নিজের প্রশংসা শুনতে ভীষণ ভাল্লাগে।
রিকশায় উঠলাম। প্রায় দশ মিনিট পরে একটা বড়, সাদা, তিন তলা বিল্ডিং এর সামনে এসে রিকশা থামালো।
বাড়িটা খুব সুন্দরভাবে সাজানো হয়েছে। বাইরে থেকেই বোঝা যাচ্ছে, বেশ জমিয়ে অনুষ্ঠান করছেন।
রিকশা থেকে নামার পরেই বাড়ির সামনে আন্টির সাথে দেখা হলো। তিনি একটা হাসি দিয়ে কাছে এলেন।
--তাহমিনা, এতোক্ষণে তুই এলি ! আমি একা একা কি করে সব কাজ সামলাই বল। তোকে তাড়াতাড়ি আসতে বললাম, যাতে করে আমায় একটু সাহায্য করতে পারিস।
-- কি করবো বল। সব কিছু গুছিয়ে রেখে তবে আসলাম।
-- হয়েছে, হয়েছে। এখন আয়, ভেতরে চল।
--রোহান, বাবা। আসো।
ঘরের ভেতরে গিয়ে তো অবাক হওয়ার পালা !! দেয়ালে, ইশার অনেক গুলো ছবি। কাচের ফ্রেমে বাধিয়ে টাঙানো আছে। ভীষণ কিউট একটা ছবির দিকে নজর পড়লো আমার। ছোট্ট, লাল শাড়ি পড়ে বউয়ের সাজে পুতুলের মতো একটা মেয়ে বসে আছে। সম্ভবত, ইশার ছোটবেলার ছবি। এত্তো ভালো লেগে গেলো যে, এক মনে চেয়েই রইলাম অনেকক্ষণ।
ইশার রুমটা সাজানো হয়েছে রঙিন সব কাগজ, আর বার্থডে বেলুন দিয়ে। বিভিন্ন ফুলের সামঞ্জস্যতায় একটা অসাধারণ সৌন্দর্য ফুটে উঠেছে, পুরো ঘরটা জুড়ে।
তবে সবচেয়ে সুন্দরভাবে সাজানো হয়েছে, ইশার রুমটাকে। এখানেই বার্থডে কেক কাটা হবে।
দেয়ালে একটা রঙিন ব্যানার টানানো হয়েছে। ইশার অপূর্ব সুন্দর ছবি ছাপা ওটাতে। আর পাশেই লেখা,
Hppy Birthday to You
Dear, Esa
Many Many Happy returns of The Day, at the age of 17
বুঝলাম, ওর ১৭ তম জন্মদিন এটা।
আন্টির সাথেই ঘুরে ঘুরে দেখছিলাম সব কিছু। এরপর, তিনি আম্মুকে সাথে নিয়ে রান্নাবান্না এর কাজে চলে গেলেন। আমি ইশার রুমের পাশের একটা রুমে বসে বসে টিভি দেখছিলাম।
এখন অবধি কোনো মেহমান আসে নি। অনুষ্ঠান শুরু হবে রাতে। একা একা কিছুটা বোরিং ফিল করতে লাগলাম। আম্মুকে বলে ছাদে চলে আসি। অনেক দূর পর্যন্ত দেখা যায় এখান থেকে। রাস্তায় গাড়ি চলছে, মানুষজন হাটাচলা করছে। গাছপালা, ইত্যাদি দেখতে লাগলাম।
পরিবেশ দেখতে দেখতে আনমনা হয়ে পড়েছিলাম।
চমক ভাঙলো, হই হুল্লোড় করে ছাদে আসা কিছু মেয়ের কথা শুনে।
-- ইশা, তুই কিন্তু আজ আমায় আগে কেক খাওয়াবি।
-- কি !! তোকে আগে খাওয়াবে? কখনোই না। আমাকে আগে। তাই না ইশা?
-- উফফফ, তোরা থামবি প্লিজ। আমি সবাইকে কেক খাওয়াবো। তোরা সবাই আমার বেষ্ট ফ্রেন্ড।
হঠাৎ, আমার দিকে নজর পড়াতে ওরা চুপ হয়ে গেলো।
আমিও চেয়ে রইলাম।
একটি মেয়ে গোলাপি রঙের জামা পড়ে ছিলো। রাজকন্যার সাজে সেজেছে। বুঝলাম, এই হলো ইশা। যার কারণে, এতো আয়োজন।
ছাদের এক পাশে বসে ছিলাম। ছোট একটা টুল রাখা ছিলো। সেটার ওপর।
ওরা আমায়, কেউ কিছু বললো না। অবাক হয়েছে, হয়তো। এখানে এভাবে আমায় দেখতে পেয়ে। ছাদের অন্য পাশে বসে ওরা আড্ডা দিতে লাগলো।
আর একটু পর পর আমার দিকে তাকাচ্ছিলো সবাই। সম্ভবত, বুঝতে চেষ্টা করছে আমি কে?
এদিকে তখন প্রায় সন্ধ্যা হয়ে গেছে।
ওরা নিচে নেমে গেলো। কিন্তু, ইশা বারবার পেছনে ফিরে তাকাতে লাগলো।
আমিও যে তাকাচ্ছিনা, ঠিক এমন নয়। বার বার তাকিয়ে দেখছি ওকে। যতো দেখি মন ভরে না। আরো দেখতে মন চায়।
বেশ অনেকটা অন্ধকার হয়ে গেছে। তখনো ছাদে বসে আছি।
ভাবলাম, নাহ। এবার নিচে যাই।
অনেক মানুষ এসেছেন। সবাই ওদের রিলেটিভ।
সে যাই হোক। পুরো অনুষ্ঠান জুড়ে আমার নজর ছিলো শুধুমাত্র ইশার ওপর। এক কথায় বলা যায়, ওকে ভীষণ ভালো লেগে গেছে। তবে এই ভালো লাগাটা অন্য সব ভালো লাগার মতো নয়। কিছুটা আলাদা।
অনেক হাসি, ঠাট্টা আর আনন্দ - উৎসবের মাধ্যমে কেক কাটা শেষ হলো।
ওর এক বান্ধবী গান গাইলো। তেমন একটা সুন্দর হয় নি। তবুও, গানটা অনুষ্ঠানের বৈচিত্র্যময়তা এনে দিয়েছে।
সব মিলিয়ে আয়োজন টা ছিলো প্রশংসার দাবীদার। আমিও অনেক উপভোগ করেছি।
খাওয়া - দাওয়ার পরে, গেস্টরা যে যার বাড়িতে চলে গেলেন। কিন্তু আমাদের তখনই যেতে দিলেন না।
ইশার আব্বু নাকি আমার সাথে কথা বলবেন।
ওনাকে দেখে বেশ ভালো মানুষ ই মনে হলো আমার। মিডিয়াম হাইট, সুঠাম দেহ, সব মিলিয়ে একজন ভদ্রলোকসুলভ চেহারা ওনার।
ইশাদের বাসায় তখন আমি, আম্মু, ইশার আব্বু - আম্মু আর ছোট, ভাই।
খাবার টেবিলে আমরা মোট ছয়জন বসে আছি।
ইশা, ওর আব্বুর পাশে। আর আমি ওর থেকে তিনটা চেয়ার ডানে, সামনা - সামনি টেবিলের বিপরীত পাশে বসে আছি। খাওয়ার মধ্যে ইশার আব্বু আমার সব খোজ - খবর নিয়ে নিলেন।
ওনার কথা - বার্তার মধ্যে একটা মার্জিত ভাব আছে। টেবিলে বসে বেশ কয়েকবার ইশার চোখাচোখি হলো। ও চোখ দুটো বড় বড় করে আমার দিকে তাকিয়ে ছিলো। ওকে এমনিতেই ভালো লাগে, তবে এখন খুব মিষ্টি লাগছে।
এরপর অনেক কথা - বার্তা হলো।
জানতে পারলাম, ইশা ইন্টারে পড়ে, গার্লস কলেজে। এবার, এই প্রথম ওর জন্মদিনের অনুষ্ঠান এতো জাঁকজমকপূর্ণ করা হয়েছে। এর পুর্বে এতোটা হয় নি।
আমরা বাসায় চলে আসলাম। ওনারা তো আসতেই দিবেন না। তারপরেও জোর করে এলাম। যাই হোক, আজ অনেক মজা হয়েছে। একটা মনে রাখার মতো দিন এটা।
বাসায় আসতে প্রায়, সাড়ে দশটা বেজে গেছে। ড্রেস চেঞ্জ করে ফ্রেশ হলাম।
মোবাইল টা হাতে নিয়ে একটু ফেসবুকে ঢুকলাম। বিছানায় শুয়ে শুয়ে ফেসবুক চালাচ্ছি। নোটিফিকেশন চেক করে দেখি যে, "দুষ্টু মেয়ে " নামের আইডি টা ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট একসেপ্ট করেছে।
বেশ কিছুসময় যাবত অনলাইনে আছি।
হালকা একটু তন্দ্রার মতো ঘুম পড়েছি, ম্যাসেঞ্জারে একটা ম্যাসেজ আসলো। ওটার নোটিফিকেশন সাউন্ডে ঘুম ভেঙে গেছে। ম্যাসেজটা চেক করে দেখি ঐ আইডির মেয়েটা সেন্ড করেছে। লেখাটা পড়ে আমার অবস্থা কিছুটা ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়ার মতো। ভাবলাম, ভুল দেখছি না তো?
--Hi..Bhaiya. How are You?
Ki koren? Nil Shirt e kintu
Apnake Darun Handsome Lage
-- হ্যালো। হ্যা, হতে পারে। কিন্তু তুমি কে? আর আমাকে তুমি কোথায় দেখেছো?
-- Hahahahaha..Bolbo Na, Bhaiya
--আমি তো নীল শার্ট পড়ে আজ একটা অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম। তুমি কি সেখানের কেউ?
--Wow, Bhaiya. Apnar Talent Aachey. Hmmm. Ami, Esa er Friend.
--ও আচ্ছা। ঠিক আছে।
এরপর, ওর সাথে প্রায় রাত তিনটা পর্যন্ত আড্ডা দিলাম। অনেক কথা জানলাম আর জানালাম। ভালোই লাগলো।
সকালে আজ একটু তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠেছি। টুথব্রাশ, নিয়ে ব্রাশ করতে করতে ছাদে আসলাম। আমাদের বাসার ছাদের পরিবেশটা বেশ মনকাড়া, মনোরম। ছাদের ট্যাংকি এর পানি দিয়ে মুখ ধুলাম। ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে বাসার নিচে চায়ের দোকানে এসে বসেছি।
মাসুম, আসলো কিছুক্ষণ পরেই। ওর সাথে গতকালের ঘটনা গুলো শেয়ার করলাম। ইশাকে ভালো লাগার কথাটাও ওকে বলি। আসলে, ও আমার বেষ্ট ফ্রেন্ড। সব কিছুই ওর সাথে শেয়ার করি।
এদিকে আবার, ম্যাসেঞ্জারে প্রতিদিন ইশার বান্ধবীর সাথে কথা হতে লাগলো।
অনেক ক্লোজ ফ্রেন্ডশিপ হয়ে গেলো মেয়েটির সাথে।
তারপর, একদিন। ঐ মেয়েটির ফ্রেন্ডলিস্টে, ইশা নামের একটা আইডি পেলাম। ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট Send করে দিলাম।
কিছুসময় এর মধ্যেই একসেপ্ট করলো।
প্রোফাইল চেক করে দেখলাম। নাহ, ওর কোনো ছবি দেয়া নেই। ভাবলাম, হয়তো এটা ওর আইডি না।
তবুও কেমন যেনো, একটা ক্ষীণ আশা জেগে উঠলো মনের মধ্যে।
দেখি নক করে, কি অবস্থা।
-- হ্যালো
--Hi
--কেমন আছো তুমি?
-- Valo, Apni kemon Achen?
--হুম। ভালো।
--Ki koren?
-- এইতো বসে আছি। তুমি?
-- Hmmm..Amio
--ও আচ্ছা।
--Bhaiya, Apni amar friend er Sathey Ato ki kotha Bolen?
-- না মানে, ও আমার সাথে আড্ডা দেয়। আর আমিও ফ্রি আছি। তাই একটু কথা বলি।
--- O Accha, Apni Janen Oor Bf Aachey?
-- না, ওতো কখনো বলে নি।
-- O Accha
--হুম।
এরপর, এভাবে অনেক কথা বলতে লাগলাম। ধীরে ধীরে জানতে পারি, এই ইশাই, আমার আন্টির মেয়ে, ইশা।
ওর সাথে এখন প্রতিদিন কথা বলি। যখন ই অনলাইন এ আসি তখন ই।
আমরা অনেক ক্লোজ হয়ে গেছি খুব তাড়াতাড়ি। ইশা, ওর সব কিছু শেয়ার করতো আমার সাথে। ও রান্না করে প্রায়ই সেগুলোর পিক তুলে আমার কাছে Send করতো। ওর আম্মুর কাছ থেকে রান্না শেখে। ভালো রান্নাও করতে পারে। বাবা মায়ের একমাত্র মেয়ে। শুধুমাত্র একটি ছোট ভাই আছে। ক্লাস ফাইভে পড়ে।
ওর সাথে খুব সুন্দর একটি সম্পর্ক তৈরি হতে শুরু করলো ধীরে ধীরে। রাত প্রায় দুইটা - তিনটা অবধি Text করতাম আমরা।
আস্তে আস্তে ইশার সাথে ভীষণ ভালো একটা সম্পর্ক হয়ে গেলো।
একদিন, রাত প্রায় সাড়ে বারোটা নাগাদ, ইশাকে ভালো লাগার কথা বলে দিলাম। ও প্রথমে ভেবেছিলো, আমি ওর সাথে মজা করছি। কিন্তু ওকে নিশ্চয়তা দেয়ার পরে বিলিভ করলো। এরপর তো, রিলেশনশিপ আরো ভালো চলতে লাগলো।
ফোনে কথা হয়েছে বেশ কয়েকবার। ভীষণ মিষ্টি ওর ভয়েস টা।
কিন্তু, সেদিনের বার্থডে পার্টির পর থেকে আমি ওদের বাসায় আর যাই নি। শুধু ম্যাসেঞ্জারেই আমাদের কথা হতো। ইশার আম্মু প্রায়ই আসতেন আমাদের বাসায়।
এমন ই একদিন বিকেলবেলা, বাসায় বসে ডায়রি লিখছিলাম। ইশার আম্মু আসলো।
আম্মুর সাথে অনেকক্ষণ কি সব নিয়ে কথা বললো, কিছুই বুঝতে পারলাম না।
বুঝলাম, রাতে যখন টেবিলে খাবার খেতে আসলাম।
--রোহান।
--জি, আম্মু।
-- ইশার আব্বু একটা চাকরী দেয়ার কথা বলেছে, তোকে। তুই কি বলিস?
-- আচ্ছা, কি চাকরী?
-- গার্মেন্টস এর। ভালো যোগ্যতা দেখাতে পারলে অনেক উচ্চপর্যায়ে যেতে পারবি। তাছাড়া, আরো অনেক সু্যোগ - সুবিধাও নাকি পাওয়া যাবে।
-- ও। তুমি কি বলেছো?
-- আমি কিছুই বলি নি। আগে তোর কাছে শুনতে চাই।
-- ঠিক আছে, আম্মু। আমারও মনে হয়, ভালো হবে। কারণ, এইচ.এস.সি. পাশ করে ভালো একটা লেভেল পর্যন্ত যেতে এটা অবশ্যই পার্ফেক্ট জব।
--তাহলে তো ভালোই হয়। আমি তোর রাজি হওয়ার কথা বলি তাহলে?
--হ্যা, বলে দাও।
বিছানায় শুয়ে শুয়ে
কিছুটা আশা, কিছুটা উদ্বেগ আর হাজার টা স্বপ্ন নিয়ে ভাবতে লাগলাম। জবটা পেলে আমার জীবনের গতি আমুল বদলে যাবে। আম্মুকে নিয়ে আমার পরিবারে সুখের শুভ সূচনা করবো নতুন করে। আর হ্যা, নতুন একজন গেস্ট ও থাকবে সেখানে। যে হবে পরিবারের ভবিষ্যৎ জীবনের কেন্দ্রবিন্দু। যাকে গেস্ট হিসেবে বরণ করে পরিবারের আদুরে আপনজন হিসেবে স্থান দেওয়া হবে।
ইশার সাথে আজ মনের সব ভাবনার কথাগুলো শেয়ার করলাম। বিয়ের কথাটাও জানালাম।
ও রাজি হয়ে গেছে। অনেক বোঝালাম,
কিন্তু, ওর সেই এক কথা। টাকা - পয়সা জীবনের সব কিছু না,রোহান। আমার একটা ভালো মন চাই। ব্যস, আমি এতেই সব চেয়ে সুখী থাকবো।
বিভিন্ন যুক্তিতর্ক করেও লাভ হলো না। ওর জেদের কাছে হারতেই হলো আমাকে। সত্যি বলতে, আমার চেয়ে অনেক ভালো ভালো ছেলে ও জীবনসঙ্গী হিসেবে পাবে। আর আমি সেটা জানি।
তাই, সামান্য আমার ছোটখাটো জীবনের সাথে, ওকে জড়িয়ে ওর ভবিষ্যৎ সুন্দর জীবন টাকে নষ্ট করতে চাইছিলাম না।
কিন্তু, ওকে ওর জেদ থেকে এক পা ও দূরে সরানো আমার সাধ্য নয়।
যাই হোক না কেনো, সিদ্ধান্ত নিলাম, ওকে আপন করার সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা করবো। আর ও তো জানি, আপন করেই নিয়েছে। আমার চাইতে ওর ভালোবাসার জোর টা একটু বেশিই বলা যায়।
সকালের, Good Morning থেকে শুরু করে রাতের, Good Night অবধি আমাদের ম্যাসেঞ্জারে প্রেমালাপ চলতে থাকে। কিন্তু, সব চেয়ে অবাক করা ব্যাপার যেটা, সেটা হলো দুজনের সেদিনের পর, আর একদিন ও দেখা হয় নি।
ও পরীক্ষা নিয়ে কিছুটা ব্যস্ত থাকলেও আমার সাথে কথা বলা বাদ যেতো না।
এক কথায়, আমাদের প্রেম 100% গতিতে রানিং আছে।
বেশ কিছুদিন পর, ইশার আব্বু তার সাথে আমায় দেখা করতে বললেন। লেখাপড়ার যাবতীয় কাগজপত্র সাথে নিয়ে তার অফিসে গেলাম। তিনি কয়েকজন লোকের সাথে আমার পরিচয় করিয়ে দিলেন।
তারপর বললেন, আগামী বৃহস্পতিবার থেকে,
রোহান তুমি কাজে জয়েন করবে। তোমার চাকরি হয়ে গেছে। সত্যি, আমি আবেগে অভিভূত হয়ে গেলাম।
সালাম জানিয়ে, বাসায় এসে আম্মুকে খুঁজতে লাগলাম।
--আম্মু, আম্মু কোথায় তুমি?
--কি হইছে বাবা, এতো খুশি কেনো তুই?
--আম্মু, আমার চাকরী হয়ে গেছে !!! তোমার আর কোনো কষ্ট থাকবে না দেখে নিও।
--আম্মু, খুশিতে প্রায় কেঁদে ফেললেন।
তার পা ছুঁয়ে সালাম করলাম। আম্মু বুকে জড়িয়ে ধরে রইলেন। চুপচাপ আম্মুর আদর উপভোগ করতে থাকলাম।
ইশাকে, খুশির নিউজ টা জানালাম। ও আজ আমার চেয়েও খুশি। খুব ভালো লাগছে। মনের ওপর থেকে একটা বড় বোঝা সরে গেলো। এখন মনটা খুব ফ্রেশ।
হঠাৎ, ইশা একটা আবদার করে বসলো। ওর সাথে দেখা করতে হবে। কিন্তু এভাবে, ইচ্ছেমত মন চাইলেই তো আর কারো বাসায় যাওয়া যায় না, ওকে বললাম।
--নাহ, ওসব আমি জানি না। তোমায় আসতে বলেছি, ব্যস। তুমি কিভাবে আসবে সেটা তোমার ব্যাপার। কিন্তু আসতে তোমাকে হবেই। সেটা যে ভাবেই হোক না কেনো।
--ওর জেদের কাছে বরাবর ই আমি পরাজিত। আচ্ছা, আসছি। তুমি বারান্দায় জানালার সামনে দাড়িয়ো। দেখা করে চলে আসবো।
--কি !!! তুমি বাসায় আসবে না?
--না মানে, হঠাৎ করে এই সন্ধ্যাবেলা তোমার বাসায় ঢুকবো। আন্টি যদি কিছু খারাপ মনে করেন?
--ঐ, শালা হাদারাম। তুমি কি চুরি করতে আসতেছো যে আম্মু খারাপ মনে করবে?
-- হা হা হা, চুরি না করলেও তার চেয়ে যে এটা বড় কিছু।
-- ও আচ্ছা। তাই নাকি? তো, কি সেটা বোকুরাম।
-- তুমি। তোমার সাথে যে প্রেম করি। আন্টি জানলে কি হবে, একবার ভেবে দেখেছো? এটা তো, চুরির চেয়েও বড় কিছু। তাই না?
-- এতো কিছু নিয়ে তোমার ভাবতে হবে না। তুমি আমায় ভালোবাসলে ই হবে। বাকিটা আমিই ঠিক করে নেবো। জীবন টা আমার। আর সেই জীবনের জীবনসঙ্গী খুঁজে নেয়ার অধিকার আমার আছে। যাকে নিয়ে আমি হ্যাপি থাকবো, আমার আব্বু - আম্মু তার সাথেই আমার বিয়ে দেবেন। তুমি একটুও চিন্তা করবা না।
--আচ্ছা, আচ্ছা। ঠিক আছে। আর একটুও চিন্তা করবো না। কিন্তু তুমি আমায় মন থেকে ভালোবাসো তো?
--আমায় সন্দেহ করো ! আজ আসো একবার। তারপর দেখাচ্ছি মজা, হাড়ে হাড়ে টের পাইবা আমি ভালোবাসি কি না।
--আচ্ছা, ম্যাডাম আসতেছি। এতো রাগ কইরেন না। বেশি রাগ করলে আবার কান দিয়ে ধোয়া বেরোবে, চুলে আগুন ধরে যাবে।
--রোহান !!! আজ আসো একবার। তোমার খবর আছে, বলে দিলাম, কিন্তু !!
--হা হা হা হা। আসতেছি।
--হুম, আসো। আজ বুঝাবো, কত ধানে কতো চাল। শালা, আমার ভালোবাসা নিয়ে সন্দেহ !!
এখন শীতকাল।
বাইরে কিছুটা কুয়াশা পড়েছে।
যথেষ্ট শীত ও আছে। তবে হাড়কাপা শীত নয়।
কোর্ট, প্যান্ট - শার্ট, বুটজুতো , আর মাফলার পড়ে রওনা হলাম। পাগলী জানপাখি টার কাছে। না জানি আজ আমার কি অবস্থা হয়। খুব রেগে আছে।
বাসার সামনের একটা দোকান থেকে কিছু চিপস আর চকোলেট কিনলাম। ইশার ছোট ভাইয়ের জন্য।
রিকশায় যাচ্ছি না। হেটে হেটে যেতে লাগলাম। হাটতে বেশ ভালোই লাগে। জ্যোৎস্নাময়ী পরিবেশ। চাঁদের আলোতে রাস্তাঘাট জ্বলজ্বল করছে।
30 মিনিটের মতো লাগলো, ওর বাসার সামনে পৌছাতে।
বাসার কলিং বেল বাজানোর পূর্বে কিছুটা ইতস্তত লাগছিলো।
তারপরেও, ওর রাগের কথা ভেবে বেল বাজালাম।
মিনিট খানেক দাঁড়িয়ে থাকার পরে, আন্টি এসে দরজা খুললেন। আমার তো নার্ভাস নাইনটিনের মতো অবস্থা।
--আরে, রোহান !! কি মনে করে। কেমন আছো বাবা? আসো, ভেতরে আসো।
-- না মানে আন্টি, আঙ্কেল চাকরি ঠিক করে দিয়েছেন। ভাবলাম, তার সাথে একটু দেখা করে আসি।
--ও আচ্ছা, তাই? খুব ভালো করেছো। কিন্তু এসব নিয়ে আসার কি প্রয়োজন ছিলো বাবা। তুমি এমনিতেই এদিকে আসো না। যাক, আজ এসেছো, খুব ভালো করেছো। তোমার আম্মু মাঝেমধ্যে আসেন। আমিও সময় পেলে যাই।
--হ্যা, আন্টি। যাবেন না কেনো। অবশ্যই যাবেন। গরীবের বাড়ি মাঝে মধ্যে গেলে গরীবরা অনেক খুশি হয়।
--ছি বাবা, এসব বলে না। কে বলেছে তোমরা গরীব !! তোমার আব্বু খুব ভালো মানুষ ছিলেন। তিনি বেচে থাকলে তোমাদের কোনো অভাব ই থাকতো না। তবে, আমার বিশ্বাস। তুমি তোমার বাবার চেয়েও ভালো কিছু করতে পারবে। অনেক ভালো একটা ছেলে তুমি। আচ্ছা, তুমি একটু বসো। আমি তোমার জন্য "চিকেন বিরিয়ানি" রান্না করবো। তোমার আম্মুর কাছে শুনেছি, তুমি নাকি ভীষণ পছন্দ করো।
--আন্টি, থাক না, এখন আবার শুধু শুধু কষ্ট করার কি দরকার?
--তুমি এখানে বসো। আমার কষ্ট নিয়ে ভাবতে হবে না।
--ইশা, এই ইশা !!
--হ্যা, আম্মু।
--এদিকে আয় তো। রোহান এর সাথে একটু কথা বল। ও একা একা বসে আছে।
--এক্ষুনি আসছি, আম্মু।
ইশা, আসার পর আন্টি বললেন।
--ওর সাথে একটু আড্ডা দে। কতোদিন পরে এসেছে। আমি খিচুড়ি রান্না করতে যাচ্ছি।
--ঠিক আছে আম্মু। তুমি রান্না করতে যাও।
আন্টি যাওয়ার সাথে সাথে, ইশা ওর রাগ দেখানো শুরু করলো।
--ঐ হাদারাম। এদিকে আসো।
--কোথায়?
--ছাদে যাবো।
--ছাদে !!! এই রাতে ? আন্টি যদি বকা দেয়?
--আম্মুকে বলে যাচ্ছি, দাড়াও।
--আরে, মাথা খারাপ হলো নাকি তোমার?
--আম্মু, রোহান ভাইয়াকে নিয়ে ছাদে গেলাম।
--ইশা, তোর সোয়েটার নিয়ে যা। অনেক শীত বাইরে।
-- আচ্ছা আম্মু।
যে ভয় পেয়েছিলাম, সেটা হলো না। যাক বাবা, বাচা গেলো।
ভরা পূর্ণিমারচাঁদ,
চাঁদের আলোতে প্রায় দিনের মতো সব দেখা যাচ্ছিলো।
--এক পাশে বসার জন্য কয়েক টা টুল রাখা আছে। বড় বড় টবে ছোট - বড় অনেক গুলো ফুল আর ফলের গাছ লাগানো। সব মিলিয়ে, ছাদের পরিবেশটা অসাধারণ। ইশা কথা বলা শুরু করলো।
--রোহান, ভাইয়া। আজ তোমার খবর আছে !!! তুমি এতো ভয় পাও কেনো, হুম। তোমার পরিবর্তে অন্য কেউ হলে দেখতে কতোবার আসতো। আর তুমি আসতেই চাচ্ছো না।
--ইশা। আসলে কথা সেটা না। আমার বেশি একটা টাকা নেই। তোমরা হলে "বটগাছের মতো বিশালাকার" আর আমাদের অবস্থা সেই তুলনায় অতি নগণ্য "ছোট একটা চারাগাছ এর মতো "
কথাটা শেষ করতে পারলাম না। ইশা এমন একটা কান্ড করলো যে, আমি নির্বোধ এর মতো ওর দিকে চেয়ে রইলাম।
টুলে বসে বসে কথা বলছিলাম। হঠাৎ কথার মাঝখানে জড়িয়ে ধরে একটা গভীর চুমু দিলো।
হা করে ওর দিকে চেয়ে রইলাম।
--ইশা, মাথা ঠিক আছে তোমার? এটা কি করলা !!
--আমার মাথা ঠিকই আছে, শালা রামছাগল কোথাকার !!! কতোবার বলেছি, আমি তোমার কোনো টাকা - পয়সা চাই না। শুধু তোমার ভালোবাসা চাই। যে ভালোবাসায় সামান্যতম খাদ থাকবে না। তোমার বুকে ঘুমাতে চাই। তোমার জীবনসঙ্গী হয়েই মরতে চাই। প্লিজ, তুমি আর না বলো না। তাহলে আমি সত্যি মরে যাবো, রোহান ভাইয়া !!!
আমি কি বলবো, ভেবে পাচ্ছিলাম না। ওর চোখের দিকে তাকিয়ে চুপ করে রইলাম। ওর চোখে কোনো মিথ্যে আশা বা ছলনা ছিলো না। শুধু একটু সত্যিকার ভালোবাসা পাওয়ার তীব্র কাতরতা।
--আচ্ছা, আমার পাগলী। ঠিক আছে। তুমি যেমন চাইবে তেমন ই হবে। এখন থেকে প্লিজ, নিজের যত্ন নিবা আর পড়ালেখার খেয়াল রাখবা।
-- হুম, রাখবো। তুমি আমায় ছেড়ে হারিয়ে যাবে না তো?
--নাহ, আমার জানপাখি। তোমায় ছেড়ে কোথাও যাবো না শুধু তোমায় ভালোবাসবো, প্রমিস।
-- সত্যি তো?
-- হ্যা, বাবা। সত্যি, সত্যি, সত্যি।
--আমার সোনাবাবু টা। আই লাভ ইউ। উম ম ম ম ম আহহহ।
কিসটা অর্ধেক দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে কে জেনো ফোন করলো। ভাইব্রেট হচ্ছে পকেটের মধ্যে।
আমি রিসিভ করার আগেই, ইশা হাত থেকে ফোনটা নিয়ে নিলো। কে ফোন দিয়েছে দেখি? রাগে ওর চোখ - মুখ লাল হয়ে আছে।
মাসুম ফোন দিয়েছে। কিন্তু শালার বিপদে পড়ে গেলাম।
Masum (মাসুম) এর পরিবর্তে Masuma (মাসুমা) টাইপ করা ছিলো। ইশা, তো রাগে ফুসতে লাগলো।
--ঐ শালা !! মাসুমা কে রে? তোরে এতো ফোন দিতাছে ক্যান?
--আরে ইশু, ওটা মাসুমা নয়, মাসুম। আমার বেষ্ট ফ্রেন্ড।
--আমারে বোকা পাইছো তুমি, হুম। এই টা কি লেখা, দেখো নিজের চোখে।
--ইসসসসিরে, সরি। টাইপিং এ ভুল হয়েছিলো।
--আমি এখন কথা বলবো। যদি তোমার কথা সত্যি হয় তো, বাইচা যাইবা আর নাহলে তোমার একদিন কি, আমার যে কয়দিন লাগে। ঠ্যাঙ ভেঙে ফেলবো।
-- আচ্ছা, ঠিক আছে। কল দিয়ে দেখো।
ইশা কল দিয়ে প্রায় দু মিনিট কথা বললো। তারপর, আচমকা পাশে থাকা ছোট একটা লাঠি নিয়ে আমার দিকে দৌড়ে আসতে লাগলো।
ওকে এভাবে আসতে দেখে আমিও দৌড় দিলাম। কিন্তু বেশিদূর যাওয়ার আগেই ধরা পড়ে গেলাম। একটা ছোট টবের চারাগাছ এর সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছি।
--আরে, দৌড়াচ্ছো কেনো। বোকুরাম। মারবো না। হা হা হা হা হা হা। হুম, তোমার কথাই সত্য। কিন্তু তারপরেও শাস্তি তোমাকে পেতেই হবে।
--কিসের শাস্তি !!
--প্রেমের শাস্তি।
বলেই ইশা আমার মাফলার টেনে ধরলো। ওর ঠোটের কাছে আমার ঠোট টেনে নিলো। তারপর, আমিও শুরু করলাম। কতোক্ষণ আর সাধু সেজে বসে থাকবো !!! হা হা হা হা।
ওর নরম - গরম মিষ্টি ঠোটের স্পর্শে আমার সমস্ত শরীর শিহরিত হচ্ছে। দুজনে এক অজানা পৃথিবীতে হারিয়ে গেলাম। তীব্র তৃষ্ণার্ত দুটি প্রাণ, প্রাণভরে ভালোবাসার অমৃত সুধা পান করতে লাগলাম।
হৃদয়ের ঝড় শান্ত হওয়ার পর, বাসার ভেতরে আসলাম। আন্টি তখনো রান্নাঘরে।
ইশা, আন্টির কাছে গেলো।
আমি সোফাতে বসে খিচুড়ির জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম।
কিছুক্ষণ পরেই খিচুরি এসে হাজির হলো। সবাই মিলে গল্প আর আড্ডাবাজি করে, শীতের মধ্যে গরম গরম খিচুড়ি উপভোগ করলাম। আঙ্কেল বাসায় আসার পর, তার সাথে বেশ কিছুসময় কথা বার্তা বলে, রাত প্রায় সাড়ে নয়টার দিকে বাসায় আসলাম।
আম্মুকে জানিয়ে এসেছিলাম। আমি ইশাদের বাসায় যাচ্ছি। তাই তিনি কোনো চিন্তা করেন নি।
বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে, কিছুক্ষণ টিভি দেখার পরে ঘুমাতে গেলাম।
মোবাইলটা নিয়ে ডেটা অন করা মাত্রই ম্যাসেঞ্জারে ইশার ম্যাসেজ গুলো দেখতে পাই।
--Rohan, Aj Darun Somoy Ketechey
I Love You, Rohan
Basay Safely Giyecho To?
Ki koro
Dinner korecho?
Dinner kore Nio
U take Care, Please Rohan
Love You
আজ আমি অনেক খুশি। কারণ, আমার কাছে মায়ের ভালোবাসা + ইশার ভালোবাসা আছে।
ভালোবাসি ইশা। আমিও তোকে ভীষণ ভালোবাসি। তুই আমার জীবনের সেরা উপহার। তোকে আমি হারাতে চাই না।
ম্যাসেজ টা সেন্ড করে।
Good Night .... wish করলাম।
তারপর, ডেটা অফ করে ঘুমিয়ে পড়ি।
আজ বৃহস্পতিবার। আমার চাকরিতে জয়েন করার প্রথম দিন। এখন নিয়মিত ঘুম থেকে তাড়াতাড়ি উঠি। গোসল করে, নাস্তা করলাম। তারপর, আম্মুর পা ছুঁয়ে সালাম করে দোয়া নিলাম।
ইশাদের বাসায় যেতে হবে। রিকশাতে অল্প কিছুসময় এর মধ্যে পৌঁছে গেছি।
বাসায় গিয়ে দেখি, ইশা প্রাইভেট পড়তে গেছে। আর ওর ছোটভাই "বাবু " আন্টির কাছে বই পড়ছে।
আঙ্কেল বাইরে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছেন।
--আসসালামু আলাইকুম, আঙ্কেল।
--ওয়ালাইকুম সালাম, বাবা। কেমন আছো তুমি?
--জি, ভালো আছি। আপনি?
--আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো। তুমি একটু বসো। আমি পাচ মিনিট এর মধ্যে আসতেছি।
আন্টি পাশের রুম থেকে বললেন,
--রোহান, নাস্তা করেছো তো?
--হ্যা, আন্টি।
--খুব ভালো। না করলে করে নাও। এটাকে তোমার নিজের বাড়ি মনে করবে। যখন মন চাইবে চলে আসবে।
--আচ্ছা, আন্টি।
এরপর, আঙ্কেল এর সাথে ফ্যাক্টরি তে গেলাম। সেখানে তিনি সবার সাথে পরিচয় করিয়ে, কাজ বুঝিয়ে দিলেন।
আমি আমার কাজগুলো অত্যন্ত দায়িত্ব, মনোযোগ, আর নিষ্ঠার সাথে করতে লাগলাম।
অল্প কয়েক মাসের মধ্যেই কাজের যোগ্যতা স্বরুপ, পদোন্নতি + স্যালারী বৃদ্ধি পেলো।
আঙ্কেল আমার ওপর যথেষ্ট খুশি।
ধীরে ধীরে ইশার পরিবারের সাথে আমাদের যোগাযোগ বেড়ে গেলো। প্রায়ই আঙ্কেল আর আন্টি আমাদের বাসায় আসেন।
আর এদিকে আমি আর ইশা, ভবিষ্যৎ জীবনের সুখের স্বপ্ন তৈরি করছি।
আমাদের ভালোবাসা সফল হওয়ার আশা, বাস্তবে রুপান্তরিত হতে যাচ্ছে।
কারণ, আশার আলোর ঔজ্জ্বল্য ধীরে ধীরে উজ্জ্বল হয়ে উঠছে।
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now